পুজোর ছুটিতে ড্রপআউটদের স্কুলে ফেরাচ্ছেন শিক্ষকরা

বাড়িতে একটু বিশ্রাম, কিংবা আত্মীয়-বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে সময়সাধ্য মতো এখানে ওখানে ঘুরে আসা, বাঙালির ছুটি কাটে এভাবেই। সেই মজাকে বিসর্জন দিয়ে পুজোর ছুটিতে স্কুলছুটদের খুঁজে আবার পড়াশোনার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন কোচবিহারের তুফানগঞ্জে অন্দরান ফুলবাড়ি হরিরধাম স্কুলের শিক্ষকরা। আশ্চর্য হলেও এটাই সত্যি।
পুজোর ছুটিতে এই স্কুলে ক্লাস হয় না ঠিকই, তবে অফিস খোলা থাকে। শিক্ষকরা তৈরি করেন ড্রপআউটদের তালিকা। অনেকগুলো দলে ভাগ হয়ে তারপর বেরিয়ে পড়েন ড্রপআউটদের বুঝিয়ে স্কুলে ফেরানোর উদ্দেশ্যে। বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক কারণে এই অঞ্চলে স্কুলছুটের সমস্যা ক্রমশ বাড়ছে। গ্রামের অনেকেই কাজের প্রয়োজনে যখন অন্য রাজ্যে পাড়ি দেন, ছেলেমেয়েদেরও নিয়ে যান সঙ্গে করে। সেইসব বাচ্চারা হিন্দিতে সাবলীল থাকলেও বাংলা বলতেই শেখে না। ফলে বাড়ি ফিরলে স্থানীয় স্কুলে মানিয়ে নিতে অসুবিধে হয় তাদের। আবার কেউ কেউ ভিন রাজ্য থেকে ফিরে বেশি বয়সে এখানকার স্কুলে যখন ভর্তি হয়, সহপাঠীদের সাথে বয়সের ফারাক একটা অস্বস্তি সৃষ্টি করে তাদের মধ্যে। সেই সব কারণে তারা স্কুলে যাওয়াই বন্ধ করে দেয়। ওই স্কুলে এখন ছাত্রদের নিয়মিত হাজিরার হার মাত্র ২৫%।
পুজোর ছুটির আগে তুফানগঞ্জের ওই স্কুলের শিক্ষকরা বুঝতে পারেন, কখনও শিক্ষা দপ্তর, কখনও পঞ্চায়েত বা প্রশাসন নানা পদক্ষেপ করলেও ড্রপআউটের এই পরিস্থিতি একদম বদলায়নি। সমস্যার গভীরতাকে উপলব্ধি করে স্কুল ছুটি হতেই তাঁরা স্কুলছুটদের বাড়ি বাড়ি যাওয়া শুরু করেন। তাঁরা বুঝেছিলেন, ক্লাস শুরু হয়ে গেলে, সিলেবাসের চাপে আর বাইরে গিয়ে এই কাজ করা সম্ভব হবে না। তাই নির্দেশ বা অতিরিক্ত ভাতার অপেক্ষা না করে যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব তাঁরা ড্রপআউটদের তালিকা হাতে বেরিয়ে পড়েছেন।
মাস্টারমশাইদের কথা শুনে অনেক বাবা-মা’ই সন্তাদের স্কুলে পাঠানোর অঙ্গীকার করেছেন, অনেক ছেলেইমেয়েই স্কুলে নিয়মিত হাজির থাকতে সম্মতি জানিয়েছে। তুফানগঞ্জেই এই স্কুলশিক্ষকরা যে কর্মসংস্কৃতি এবং দায়বদ্ধতার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তাকে কুর্নিশ করতেই হয়।