No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    বাঙালির হেঁশেলে যেভাবে ঢুকল আচার

    বাঙালির হেঁশেলে যেভাবে ঢুকল আচার

    Story image

    শেষপাতে অম্ল না হলে খাওয়া নাকি ঠিকঠাক হয় না। তাই বাঙালির শেষ পাতে চাটনি বা আচার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলের মরসুমের শুরুতেই মা-ঠাকুমারা ফল কেটে রোদে শুকিয়ে তেল মশলা দিয়ে তুলে রাখে সারা বছর খাওয়ার জন্য। কিন্তু চাটনি বাংলার নিজস্ব হলেও আচারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পশ্চিমভারতের নাম। সুলতানি আমলে মানসিংহের হাত ধরে বাংলায় প্রবেশ ঘটে আচারের। পশ্চিমভারতের বেশ কয়েকটি জায়গায় রাজস্থান পাঞ্জাবের মানুষের আনাগনা হয়। তাদের সংস্কৃতিতে আচারের প্রচলন আছে। কারণ মরুভূমি অঞ্চলে সেইভাবে চাষবাস হয় না। আচারের মাধ্যমে নানাধরনের সবজিকে সংরক্ষণ করা হয়। মাছে-ভাতে বাঙালির শেষ পাতে চাটনির প্রয়োজনীয়তা আবার অন্য রকম। গ্রামবাংলার অনেকের বলে থাকেন ‘আইষ্টা ওঠাইতে চাই টক-মিষ্টি চাটনি’।

    আচার ও চাটনি দুটি চরিত্রগতভাবে এক হলেও তৈরির পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য দেখা বর্তমান। আচারের উপাদানকে প্রথমে রোদে কিছুদিন শুকিয়ে নিতে হয় যাতে এর মধ্যেকার জল না থাকে। চাটনি তৈরি করা হয় একদিনের খাবারের জন্য। তাই চাটনিকে অনেকে বলে এক চাটন। তবে আচার প্রচলিত ছিল বণিক অথবা যাযাবর সম্প্রদায়ের মধ্যে যারা দূর দূরান্তে পাড়ি দেন। ইতিহাসবিদদের মতে পৃথিবীর প্রাচীনতম খাবার আচার। ২৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রাচীন মেসোপটেমিয়ান সভ্যতার সময় থেকে মানুষ আচার খাওয়া শুরু করে। পৃথিবীর প্রাচীনতম আচারের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় শসার তৈরি আচারের কথা। ধারণা করা হয়, খ্রিস্টপূর্ব ২০৩০ সালে মেসোপটেমিয়ায় শসার আচারের প্রচলন ছিল। শোনা যায়, রানি ক্লিওপেট্রা ও জুলিয়াস সিজারের আচার খেতেন ভালোবাসতেন। রানি ক্লিওপেট্রা আচার খেতেন সৌন্দর্য রক্ষা করার জন্য।  বলা হয়, আচার ছাড়া ক্রিস্টোফার কলম্বাস আমেরিকা আবিস্কার করতে পারত না। ১৪৯২ সালের আমেরিকা অভিযানে কলম্বাস তাঁর নাবিকদের রেশন হিসেবে আচার দিতেন। এই আচার তাদের ভিটামিন সি-এর অভাব মিটিয়ে স্কার্ভি রোগের হাত থেকে বাঁচিয়েছিল। &

    বাংলায় চাটনি বা আচার হয় টক, মিষ্টি, ঝাল, টক-ঝাল-মিষ্টি। লেবু, আমড়া, জলপাই, আমলকি, তেঁতুল, কুল, চালতা, আনারস, কামরাঙ্গার মত টক জাতীয় ফল ছাড়া ও বিভিন্ন ধরনের সব্জি যেমন শসা, গাজর, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, বেগুন, টমেট, বরবটি, টক ভেণ্ডি, বাঁশ দিয়েও আচার ও চাটনি করা হয়।

    পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাবে আচার তৈরি করা হয়।  শুধু ফল কিংবা সব্জি নয়। বিভিন্ন ধরণের মাংস, মাছ এবং ডিমেরও আচার তৈরি করা হয় এগুলোকে দীর্ঘ দিন সংরক্ষণ করার জন্য। কোন কোন দেশে মাংসেরও আচার তৈরি করা হয়। চীনে ডিমের আচার, স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশগুলোতে হাঙ্গরের মাংস দীর্ঘদিন পরে খাওয়া হয় মূলত আচার বানিয়ে।

    তবে আচার তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুল্ম শুলফা প্রথম ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা থেকে পশ্চিম ইউরোপে আসে নবম শতকে। ১৬৫৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে শসা থেকে আচার তৈরি করে ব্যারেলে করে বিক্রি করতেন দেশে-বিদেশে।

    আচার একটা প্রাচীন প্রযুক্তি, যখন ফ্রিজ ছিল না, ড্রাইয়ার ছিল না, বড় বড় হিমাগারও ছিল না তখন ফল বা সবজিকে এমনভাবে সংরক্ষণ করে রাখা হত।

    আচারের এত গুণ আর আচার নিয়ে এত বিশদ ইতিহাসের বিষয় মনে রাখতে আমেরিকাতে সেই ২০০১ সাল থেকে ১৪ নভেম্বর দিনটিকে আচারের দিন বা Pickle Day হিসেবে পালন করা হয়। এদিন সবাই মনে করে খাবারের সাথে আচার খায় আর একে অন্যকে আচার উপহারও পাঠায়।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @