আহ্লাদের মৎস্যমুখ

মাছে-ভাতে কেটে যায় বাঙালির দিন। যুগ যুগ ধরে কতশত মাছ যে বাঙালির রসনা তৃপ্তি করেছে তার ইয়ত্তা নেই। ভেটকি, রুই, কাতলা, পাঙাস, পাশো, শিঙি, খোলশে, কই, চিতল, শোল, মৃগেল, বোয়াল, বীরবল, চাপিলা, ফ্যাসা, বাতাসি, চিংড়ি, ইলিশ আরও কত কী। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে আমেরিকান কই, লায়লন টিকা, রূপচাঁদ মত হরেক রকম মাছ। এই সব মাছের ঝোল অথবা ঝাল আর সঙ্গে গরম ভাত ছাড়া বাঙালির জীবন যেন অসম্পূর্ণ।
মাছ ছাড়া বাঙালির দৈনিক জীবনে কোনো অনুষ্ঠান ভাবা যায় না। কথায় বলে, একটু আঁশটে গন্ধ না হলে নাকি রোজকার খাবারের পর্বটা ঠিকঠাক সম্পন্ন হয় না। স্বয়ং রবিবাবু বলেছিলেন, “ধনেশাক দিয়ে ডিমভরা কইমাছের ঝোল। এর আনন্দ সুঘ্রাণ তখন শিল্প সুষমার সাথে হ্লাদিত রসনায় মেলবন্ধন তৈরি করে এক তুলনাহীন যুগলবন্দী।”
মহাভারত, ভগবত গীতা, রামায়ণ, রামচরিত, মানস, পুরাণকাহিনি সর্বত্রই মাছের উপস্থিতি। মাছ উর্বরতা ও শুভলক্ষণের প্রতীক। বিষ্ণুর এক অবতার মাছ। এছাড়া বয়নশিল্প, অলংকার শিল্প সর্বত্র মাছের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। আসলে মাছ শুধু বাঙালির জীবন-জীবিকার সঙ্গে নয়, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সঙ্গেও যুক্ত। চলুন আজ শিখে নিই এই গরমের দুটি উপাদেয় মাছের পদের রেসিপি।
আরও পড়ুন
‘মালয়কারি’ থেকে এসেছে মালাইকারি
লেবুপাতায় পাবদা
উপকরণ ও পরিমাণ: পাবদা মাছ (মাঝারি) আধা কেজি, পেঁয়াজবাটা ৪ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, সয়াবিন তেল আধা কাপ, লেবুপাতা ২-৩টা, লেবুর রস ২ চা-চামচ, চিনি ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়ো ১ চা-চামচ, জিরে গুঁড়ো, ১ চা-চামচ, কাঁচালঙ্কা ৫-৬টা, লবণ প্রয়োজনমতো, লঙ্কাগুঁড়ো দেড় চা-চামচ ও সরষেবাটা ১ টেবিল চামচ।
প্রণালী: মাছ কেটে পরিষ্কার করে ধুয়ে জলে ঝরিয়ে নিতে হবে। একটি ছড়ানো পাত্রের তেলে পেঁয়াজ কুচি হালকা ভেজে সব বাটা ও গুঁড়ো মশলা ও ১ কাপ জল দিয়ে কষাতে হবে। মশলা কষানো হয়ে গেলে যখন তেলের ওপর উঠবে, তখন নুন দিয়ে নেড়ে মাছগুলো বিছিয়ে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে রান্না ঢেকে করতে হবে। ২ মিনিট পর কড়াই ঝাঁকিয়ে মাছের সঙ্গে মশলা মেশান। একবার মাছ সাবধানে উল্টিয়ে দিতে হবে। ঝোলের জন্য ১ কাপ গরম জল দিয়ে ঢেকে দিন। ২ মিনিট পর লেবুর রস, চিনি ও কাঁচালঙ্কা দিয়ে কড়াই ঝাঁকিয়ে মিশিয়ে দিতে হবে। সবশেষে লেবুপাতা ২ টুকরা করে দিয়ে ২-৩ মিনিট রান্নার পর যখন ঘ্রাণ বের হবে, তখন গরম-গরম পরিবেশন করুন।
মাগুর মাছে বড়ির ঝোল
উপকরণ ও পরিমাণ: মাগুর মাছ ৩-৪টা, বড়ি ১০-১৫টা, বেগুন ২টি, আলু ২টি, কাঁচালঙ্কা ৫-৬টা, লবণ পরিমাণমতো, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, লঙ্কাগুঁড়ো ১ চা-চামচ, রসুনবাটা দেড় চা-চামচ, পেঁয়াজবাটা ৫ টেবিল চামচ, জিরাগুঁড়ো ১ চা-চামচ ও তেল ১ কাপ।
প্রণালী: বড়িগুলো অল্প তেল দিয়ে হালকা ভেজে রাখতে হবে। মাছ কেটে ভালোভাবে জলে পরিষ্কার করে টুকরো করে নিতে হবে। বেগুন ও আলু ডুমো করে কেটে সামান্য নুন ও হলুদ মেখে ভেজে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন পুড়ে না যায়। প্যানে বাকি তেল দিয়ে পেঁয়াজবাটা ২ মিনিট কষিয়ে নিন। বাকি মশলাগুলো জলে দিয়ে গুলিয়ে দিতে হবে। নুন দিন। মশলার গন্ধ চলে গেলে মাছের টুকরাগুলো দিয়ে কষিয়ে বেশি করে ঝোল দিতে হবে। ফুটে উঠলে আলু ও বেগুন দিয়ে ঢেকে মাঝারি আঁচে রান্না করুন। একটু পর ভাজা বড়িগুলো কাঁচা মরিচ দিয়ে রান্না করতে হবে। সবজির বড়ি সেদ্ধ হয়ে পর্যাপ্ত ঝোল থাকা অবস্থায় নুন চেখে ধনেপাতা অথবা জিরা গুঁড়ো দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে। একটু পর গরম-গরম পরিবেশন করুন। খেয়াল করুন তরকারিতে যদি বেশি ঝোল না থাকে, তবে বড়ি ও আলুতে ঝোল টেনে নেবে।