No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ‘ও কে, ও কে গো!’— একটি দেওয়াল লিখনের ধাঁধাঁ

    ‘ও কে, ও কে গো!’— একটি দেওয়াল লিখনের ধাঁধাঁ

    Story image

    রবীন্দ্রনাথের ‘নিশীথে’ গল্পটি মনে পড়ে? সেখানে একটা আর্তপ্রশ্ন ধাওয়া করে ফিরত দক্ষিণাচরণকে। ‘ও কে, ও কে, ও কে গো!’ দক্ষিণাচরণের অপরাধবোধই যে এর জন্য দায়ী, তা পাঠকমাত্রেই জানেন। কিন্তু মুস্কিল হল, ইদানীং প্রায় একই প্রবণতা আমারও শুরু হয়েছে। রাস্তায় বেরিয়ে দেওয়ালের দিকে তাকালেই জনান্তিকে শুধোতে ইচ্ছে করছে-- ‘ও কে, ও কে, ও কে গো!’ মনে হচ্ছে, পকেটে রং-তুলি নিয়ে ঘুরি। একটা করে প্রশ্নচিহ্ন বসিয়ে দিই মোক্ষম জায়গায়। কিন্তু, এহেন বিপজ্জনক ইচ্ছের আড়ালে আমার অপরাধবোধটা খুঁজে পাচ্ছি না।

    দাঁড়ান, ব্যাপারটা ভেঙে বলি। ভোটের বাজারে রকমারি প্রার্থীর দেওয়াল লিখন চোখে পড়ছে নিশ্চয়ই। রাস্তায়, গলির ভিতরে তস্য গলিতে সব দেওয়াল, পাঁচিলই এই ক'দিনের জন্য ‘বুকড’। সেখানে বড়ো বড়ো করে প্রার্থীর নাম, প্রতীক, ‘এই চিহ্নে বোতাম টিপুন’ বা ‘ভোট দিন’ লেখা। আর, সেইসঙ্গে প্রার্থীর নামের পর ছোটো করে লেখা-- ‘কে’। এবং সেই ‘কে’ প্রার্থীর নামের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে লুটোপাটি খাচ্ছে অসহায়ের মতো। প্রার্থীর নাম আলাদা, ‘কে’ আলাদা। বেশিরভাগ জায়গাতেই এটাই ঘটেছে। মনে হচ্ছে, যেন বা প্রার্থী কে সেটাই জানতে চাওয়া হচ্ছে।

    বিশেষ্য বা সর্বনামের সঙ্গে যে ‘কে’-টি যুক্ত হয়, সেটি হল বিভক্তি। এই 'কে'-র তো আলাদা করে বসার নিয়ম নেই। এবার প্রার্থীর নাম মানেই সেটি বিশেষ্য। সে নাম মিমি চক্রবর্তী হলেও বিশেষ্য, নেপালদেব ভট্টাচার্য হলেও বিশেষ্য, অর্জুন সিংহ হলেও বিশেষ্য। এঁদেরকে ভোট দিতে বললে ‘কে’ বিভক্তিকে এঁদের নামের সঙ্গেই জুড়ে বসতে হবে। অথচ বসছে আলাদা। যেমন ‘সৌগত রায় কে ভোট দিন’। এই ভুলে সব পার্টির প্রার্থীরাই একজোট। সামান্য কয়েকটি জায়গায় অবশ্য ‘কে’ নামের সঙ্গেই জুড়ে বসেছে। কিন্তু, সে যেন ঘোর ব্যাতিক্রম।

    আর রাস্তায় বেরিয়ে এইটা দেখলেই মাথায় কিলবিল করে উঠছে ওই ভূতটা-- ‘ও কে, ও কে, ও কে গো!’ মনে হচ্ছে, ‘কে’-র পরে একটা প্রশ্নচিহ্ন বসিয়ে দিই।

    ‘কে’ যদি আলাদা করে বসে, তাহলে সেটি প্রশ্নবাচক সর্বনাম। তার মানে কারো একটা পরিচিতি জানতে চাওয়া হচ্ছে। ভোটপর্ব এলেই দেওয়াল জুড়ে তাই একটা হাঁসজারু গল্প শুরু হয়। বড়ো বড়ো করে প্রার্থীর নাম আর তারপরে লেখা ‘কে’। প্রার্থী কে-- কেউ যদি প্রশ্নচিহ্নটা বসিয়ে দেয় তাহলেই সর্বনাশ।

    ভোটবাজারে বানান আর ভাষাবিপর্যয়ের অন্যান্য নমুনা বাদই রাখলাম, কিন্তু প্রার্থীর পরিচয় দিতে গিয়ে তাকেই যদি ‘কে’ বলে শুধোতে হয় দেওয়াল লিখনে, তাহলে যে ঘোর অমঙ্গল। ভাষার পাশাপাশি ভাষাভাষীদেরও। 

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @