No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    একশোয় পড়লেন কফি হাউজের কবিয়াল 

    একশোয় পড়লেন কফি হাউজের কবিয়াল 

    Story image

    কবিতা কৃষ্ণমূর্তিকে খুব স্নেহ করতেন মান্না দে। একবার কবিতা কৃষ্ণমূর্তি মান্নাবাবুর বাড়িতে এসে জানিয়েছিলেন, তাঁর একটা গান খুব হিট করেছে – “তু চিজ বড়ি হ্যায় মস্ত মস্ত”। এই সংবাদে কিন্তু ক্ষুব্ধই হলেন মান্না দে। বললেন, “তুমি নিজে একজন মহিলা হয়ে আরেকজন মহিলাকে ‘চিজ’ বলে সম্বোধন করছ”! অগ্রজ শিল্পীর এই ধরনের প্রতিক্রিয়ায় কেঁদেই ফেলেছিলেন কবিতা কৃষ্ণমূর্তি। পরে অবশ্য মান্নাবাবুর প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা বেড়ে গিয়েছিল। এরকমই ছিলেন মান্না দে। মহম্মদ রফি একবার বলেছিলেন, “আপনারা সবাই আমার গান শোনেন। আর আমি কেবল শুনি মান্না দে’র গান”।

    প্রথম জীবনে খেলাধুলোর দিকে আগ্রহ ছিল মান্নাবাবুর। কুস্তি, বক্সিং-এর মতো খেলায় পারদর্শী ছিলেন যৌবনে। ভালোবাসতেন ফুটবল খেলতে। আর পছন্দ ছিল আইনজীবীর পেশা। সংগীতের জগতে আসবেন, নাকি আইনের চর্চা করবেন, এই নিয়ে ধন্দ ছিল মনে। তাঁর কাকা কৃষ্ণচন্দ্র অবশ্য চাইতেন যে ভাইপো পাকাপাকিভাবে গানেই ডুবে থাকুক। কাকার ইচ্ছেতেই শেষ পর্যন্ত গানের দুনিয়ায় এলেন। শাস্ত্রীয় সংগীতে ছিল তাঁর অসামান্য দখল। তালিম নিয়েছিলেন প্রথমে কাকা এবং উস্তাদ দবীর খাঁ, তারপর উস্তাদ আমন আলি খাঁ, উস্তাদ আবদুল রহমান খাঁ, উস্তাদ গুলাম মুস্তাফা খাঁ’র মতো প্রবাদপ্রতীম শিল্পীদের থেকে।  

    তবে ধ্রপদী সংগীতের ছক থেকে তিনি বেরিয়ে এসে তৈরি করেছিলেন ভিন্ন এক শৈলী। নিজের আত্মজীবনী ‘জীবনের জলসাঘরে’তে লিখেছেন, “প্রথমত আমি কোনোদিনই সেভাবে উচ্চাঙ্গ শিল্পী হতে চাইনি এবং হওয়ার কোনও চেষ্টাও করিনি। আমি প্রথম থেকেই চেয়েছিলাম লঘুসংগীত এবং আধুনিক গানের জগতে থাকতে, প্রতিষ্ঠা পেতে। আর এই আধুনিক গান বা লঘুসংগীত ঠিকঠিকভাবে গাইতে গেলে, গলায় সুরের দ্যোতনা ঠিকভাবে ফোটাতে গেলে যেটুকু উচ্চাঙ্গ সংগীত জানার দরকার – ঠিক ততটাই আমি শিখতে চেয়েছিলাম”। মান্না দে বিয়ে করেছিলেন দক্ষিণ ভারতীয় সুলোচনা দেবীকে। যার সুবাদে দক্ষিণি গানেও ছিলেন যথেষ্ঠ সাবলীল। পাশাপাশি, স্ত্রীর পাশ্চাত্য সংগীত শোনার অভ্যেস থেকে তিনিও পশ্চিমি গানে মজলেন। ভালোবাসতেন কীর্তনও।

    আরও পড়ুন
    মনে মানবেন্দ্র

    তাই মান্না দে’র গানে দেখা যায়, তাঁর গলায় ধ্রুপদী ঝোঁক আছে, সুরের ঝংকার দিয়ে তিনি শ্রোতাকে মুগ্ধ করেন, কিন্তু, পণ্ডিতি দেখানোর কোনো স্পৃহা নেই। সুর, তাল, লয়ের জটিলতা আম-শ্রোতাকে ক্লান্ত করে না, বরং মান্না দে’র গান যে কোনো সাধারণ মানুষের মনে গেঁথে যায় সহজেই। প্রচণ্ড নাটকীয়তা ছিল তাঁর গানে। বিশুদ্ধ শাস্ত্রীয় ঘরানার সঙ্গে মেঠো সুরকে মিশিয়ে দিতেন অনায়াসে। শব্দ নিয়ে খেলা করতেন, আবার তাতে কমেডির রসও ঝলক দিত। কখনও বা চলে আসত পশ্চিমি টান। আর সবকিছুকেই ছাপিয়ে যেত শিশুর মতো এক অপার বিস্ময়বোধ। মান্না দে’র গানে সেটাই ছিল প্রাণশক্তি। “কফি হাউজের আড্ডা” কিংবা “সে আমার ছোটোবোন” গেয়ে একটা সময়ে বাঙালির নস্টালজিক হৃদয়ে ঝড় তুলে দিয়েছিলেন। আজ তাঁর একশোতম জন্মজয়ন্তী। এখনও তাঁর গান শুনলে মনে হয় যে তিনি দূরে কোথাও জাননি, মনের খুব গভীর থেকে একইভাবে শ্রোতাকে মাতিয়ে রাখছেন। 

    ঋণস্বীকার – শান্তনু মৈত্র, ব্রাত্য বসু, শ্রীকান্ত আচার্য, রূপায়ণ ভট্টাচার্য এবং হিমাংশু সিংহ। 

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @