“অকারণে হর্ন বাজায় বোকারা”- বলছেন মমিনুর রহমান

মমিনুর রহমান রয়্যাল ফাইন আর্টসে স্নাতক পর্ব শেষ করেছেন ঢাকার ইউনিভার্সিটি অফ ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (UODA) থেকে। পেশাগতভাবে প্রায় দশবছর রয়েছেন বিজ্ঞাপনে। খুলনা ডিভিশনের যশোরে জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। অনেকের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে ভালোবাসেন। সামাজিক সচেতনতা যাতে আরও ছড়িয়ে পড়ে, তার জন্য মমিনুরের চেষ্টা বহাল আছে। তাঁর একটি ফেসবুক পেজ ‘রয়্যালের ছবি/ RoyalerChhobi’ এই মুহূর্তে খুবই জনপ্রিয়। তাঁর সঙ্গেই আলাপ জমালেন বঙ্গদর্শনের প্রতিনিধি সুমন সাধু।
• আপনার ফেসবুক পেজ ‘রয়্যালের ছবি’ বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলাম। সেখানে একটি ছবিতে দেখলাম লেখা আছে ‘হর্ন হুদাই, বাজায় ভুদাই’। এই ব্যাপারে কিছু বলুন।
হর্ন হুদাই, বাজায় ভুদাই- এটা একটা সামাজিক আন্দোলন বলতে পারেন, আমি যশোর বাংলাদেশের ছেলে। কর্মসূত্রে ঢাকায় থাকি। এই শহর সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। সবাই জানে এই শহর খুব ঘনবসতিপূর্ণ। এর ডিটেইল আপনি অনলাইনেই পাবেন। এই শহরে গাড়ির গতি খুব কম যা একটা সাইকেলের মতো বা তারও কম ধরতে পারেন। মানুষ ১৬ কিলোমিটার যেতে সময় নেয় দুঘন্টা বা মাঝে সাঝে ৩ ঘন্টাও। এর ঘনবসতিপূর্ণ জায়গায় আমরা যারা গাড়িতে চড়ি তাদের যেন সবচেয়ে বেশি তাড়া। তাদের সবার আগে যাওয়া চাই। অকারণ হর্ন বাজাতেই থাকে। শিশু বৃদ্ধ যাঁরা হাঁটেন বা রিক্সায় চড়েন তাদের খুব অসুবিধা হয়। এটা খুব বিরক্তিকর। মানুষের মেজাজ খারাপ হওয়ার পেছনে হর্নের অনেক ভূমিকা রয়েছে। এটা গুগল করলেই পাওয়া যাবে। গর্ভবতী মায়েদের বাচ্চার ক্ষতি হয় এর কারণে। শিশুরা ছোটবেলা থেকেই চিরস্থায়ী বধির বা কালা হয়ে যেতে পারে। এসব বিষয় চিন্তা করে এই হর্নের বিপক্ষে আমার এক ছোট্ট উদ্যোগ। হুদাই ঢাকার প্রচলিত শব্দ, যার অর্থ হল একারণে। আর ভুদাই মানে বোকা, এটাও প্রচলিত। পুরো অর্থ দাঁড়ালো অকারণে হর্ন বাজায় বোকারা। কিন্তু একটু স্ল্যাং- যা মানুষ কে লজ্জা দেয়ার কারণেই করা হয়েছে। যাতে কিছু মানুষ লজ্জিত হয়ে এই কাজটি না করেন।
• এই উদ্যোগ কি আপনার একার? নাকি সঙ্গে পেয়েছেন কাউকে?
সম্পূর্ণ আমার একার উদ্যোগ। এটা আমি শুরু করেছিলাম চার বছর আগে। এরমধ্যে কলকাতা গিয়েছিলাম। আপনাদের বঙ্গদর্শন-এ কাজ করেছিলাম। তখন এই কাজ করা হয়নি। এখন আবার শুরু করেছি।
• তো আপনি যাদের উদ্দেশ্যে এই কাজটা করছেন তাদের থেকে কেমন প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন বা পাচ্ছেন?
খুবই ভালো। এটা ষ্টিকার হয়েছে, টি-শার্ট হয়েছে। উদ্যোগটি এই মুহূর্তে করা বাংলাদেশের হর্ন বিরোধী একমাত্র ক্যাম্পেন যেটি সবাই প্রশংসা করেছে এবং করছে। এমনকি নিজেদের গাড়িতে, বাইকে এই স্টিকার লাগিয়েছেন।
সবাই যেমন ব্যবহার করছেন তেমন এর উপকারিতাও পেয়েছেন।
• যখন এই কাজটা শুরু করেছিলেন তখন আপনি কীভাবে এটার প্রচার করতেন?
প্রথমে ফেসবুকে। এরপর অনেকেই নিজেরা ব্যানার বানিয়ে নিজ উদ্যোগে রাস্তায় নেমেছিলেন। আমি জানতাম না, পরে জেনেছি। এখন আমি টি-শার্টে স্টিকার লাগিয়ে এই প্রতিবাদ করছি।
• বাহ! তাহলে তো আপনার উদ্যোগ অনেকাংশে সফল হয়েছে। এখন কি তবে একটু হলেও ঢাকা শহরে গাড়ির হর্ন বাজানো কমেছে?
হ্যাঁ লোকে তো বলে তাই। কাজটি আসলে আরও করতে হবে, মানুষকে জানাতে হবে। থেমে থাকলে চলবে না।
• তো আপনি যখন এই উদ্যোগের ফল পেয়েছেন, তাহলে নিজে থেকে আপনার সঙ্গে কাজ করবে বলে কেউ এগিয়ে আসেনি?
এসেছেন এবং আসছেন।
• আগামীদিনে এই কাজটাকে কীভাবে আরও মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিতে চাইছেন? পরিকল্পনা আছে কিছু?
আসলে এটা একটি কন্টিনিউ প্রসেস। তবে যেহেতু শব্দটা সকলে নিতে পারবে না, যেহেতু একটু স্ল্যাং, তাই টিভি বা অন্য মাধ্যমে যাওয়া মুশকিল। তবে সহযোগিতা পেলে অবশ্যই বিষয়টা নিয়ে অনেকদূর যেতে চাই।
• কিছুদিন আগেই ঢাকায় একটা বড় আন্দোলন হয়ে গেল। যেখানে স্কুল পড়ুয়ারাও পথে নামলেন। সেটা কিন্তু এই রাস্তার যানজট এবং তার ফলে মৃত্যু এই দিয়েই শুরু হয়েছিল। সেখানে তো আপনার আন্দোলন একটা ইতিবাচক এবং অত্যন্ত তাৎপর্যবহ দিক। এই আন্দোলন নিয়ে আপনার কী মত?
এটা অত্যন্ত যৌক্তিক আন্দোলন, তবে এই আন্দোলন নিয়ে খুব বেশি কথা বলতে চাইছি না। বুঝতেই পারছেন কেন। শুধু এটুকুই বলব সবার আগে আমাদের সচেতন হতে হবে।
• আপনি এমনিতে কী করেন? মানে পেশা কী?
আমি একটা বিজ্ঞাপন সংস্থায় কাজ করি। শিল্প নির্দেশনা আমার কাজ।
• পেশার পাশাপাশি এই আন্দোলনকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া, ব্যালেন্স করেন কীভাবে? তাও আবার চার বছর ধরে করছেন।
আমার কাজের ফাঁকে করি। যখনই সুযোগ পাই তখন। আসলে এটা আমার দায়িত্ব বলে মনে করি। শিল্পীর সামাজিক দায়িত্ব না থাকলে সে শিল্পী নয়- ঋত্বিক ঘটক একথা বলেছিলেন। আমিও তাই মনে করি। বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসাবে এটা আমার কর্তব্য।
• একদমই তাই। এখন কি আমরা সামাজিক দায়িত্বগুলো এড়িয়ে চলি?
মমিনুর রহমান- হ্যাঁ অনেকটাই। ভাবিই না আমাদের সামাজিক দায় আছে। ভাবি আমার তো চলে যাচ্ছে, কার কী হল তাতে আমার কী? ছোটবেলার শিক্ষাটা সেই বইতেই রয়ে গেছে। বাস্তবে তার কোনও প্রতিফলন নেই।