কেমন আছে সেদিনের লোকেশন হাট?

দেড়শো বছরের পুরনো শিলিগুড়ি মহাবীরস্থান এলাকার ডি আই ফান্ড মার্কেট সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে। ব্রিটিশ আমলে শুরু হওয়া ওই ঐতিহ্যমণ্ডিত মার্কেট বাঁচাতে পুর প্রশাসনের কাছে দাবি জানালেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা।

শিলিগুড়ি টাউন স্টেশন সংলগ্ন এই মার্কেট ইস্টার্ন বেঙ্গল রেল কোম্পানির অধীনে ছিল। পরবর্তীতে টাউন স্টেশনের গায়ে লাগানো রেল কলোনি নিজেদের অধীনে রেখে রেল কোম্পানি শিলিগুড়ি হাট ও মহাবীরস্থানের জমিগুলি দার্জিলিং ইমপ্রুভমেন্ট ফান্ডকে হস্তান্তর করে। তখন থেকে এই বাজার এলাকাটি ডি আই ফান্ড মার্কেট নামে পরিচিত হয়। শিলিগুড়ি ডি আই ফান্ড মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বকুল চন্দ্র দে দাবি করেন, শিলিগুড়ির প্রথম এই বাজার শুরু হয়েছিল ১৮৩৮ সালে। ব্রিটিশ সরকার এটি চালু করেন। তখন শিলিগুড়ি মানে আজকের শিলিগুড়ি ছিল না। তখন সেই বাজার বা হাটকে ঘিরেই শিলিগুড়ির যাত্রা শুরু হয়। ঘন জঙ্গলে ভরা সেই হাটের নাম ছিল লোকেশন হাট। পরবর্তীতে ১৮৬৮ সালে সেটি হস্তান্তর করা হয় দার্জিলিং ইমপ্রুভমেন্ট ফান্ডের কাছে। স্থির হয়, ঐ হাট থেকে ৫০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে তা জমা করা হবে জেলা ইমপ্রুভমেন্ট ফান্ডকে। আর সেখান থেকে ৮ হাজার টাকা নিয়ে শিলিগুড়ি পুরসভাকে দেওয়া হবে হাটের উন্নয়নের জন্য।

৬২.৭২ একর নিয়ে শুরু হওয়া হাটের জমির মধ্যে ২.৬৩৮৫ একর জমি ১৯৯৬ সালে শিলিগুড়ি পুরসভার হাতে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত হাটের উন্নতি হয়নি। হাটে নানান সমস্যা রয়েছে। আশ্বাস পেয়েই হাটের জমি বিষয়ক মামলা তুলে নিয়েছিলেন বকুলবাবুরা। কিন্তু মামলা তুললেও তাঁদের অনেক শর্ত মানা হয়নি। ফলে তারা আবার মামলায় যেতে পারেন বলে বকুলবাবু জানান। অভিযোগ, হাটে কোনও শৌচাগার নেই। বুধ ও রবিবার হাট বসে। পাঁচশোর বেশি ব্যবসায়ী রয়েছেন সেখানে। লেনদেন হয় লক্ষ লক্ষ টাকার। পুরনো দিনের হাতে তৈরি কুলো, ঝুড়ি পাওয়া যায় হাটে। যদিও সময়ের নিয়ম ও আধুনিকতার জেরে হাট থেকে অনেক কিছু হারিয়ে গিয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই জল জমে। রাস্তাঘাট ভাঙা। নর্দমা পরিষ্কার হয় না। নর্দমাগুলো অর্ধসমাপ্ত। ফলে এক বিশ্রী অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন বলে জানালেন ব্যবসায়ী সন্তোষ কুমার গুপ্তা ও শঙ্কর সাহা।

উঠে গিয়েছে হাটবাবুর অফিসও। অথচ পুরসভা কর নেয় হাট থেকে। বকুলবাবুরা অভিযোগ করেন, হাইড্রেনের ওপর দোকানপাট গজিয়ে উঠছে। তা থেকে অনেক বিপত্তি তৈরি হচ্ছে। শুঁটকি মাছের বিশাল বাজার বসে হাটে। তার সঙ্গে মুড়ির হাট। শিলিগুড়ির অনেক মানুষ ভালো মুড়ির জন্য ওখানে যোগাযোগ করেন। কিন্তু এই প্রাচীন হাট সংস্কারের অভাবে মরে যেতে থাকায় অনেকের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, প্রশাসন তাঁদের হাতে এখন হস্তান্তর করেনি ঐ হাট। হাটটি এখন নো ম্যানস্ ল্যান্ডের মতো হয়ে গিয়েছে। তবুও তাঁরা সেখানে একটি টয়লেট তৈরির ভাবনায় রয়েছেন। হাটের উন্নয়নের কথাও তাঁরা ভাবছেন।