No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ‘ট্রোলে’ ভুবন ভরিয়ে দেবে, ভেবেছিল...  

    ‘ট্রোলে’ ভুবন ভরিয়ে দেবে, ভেবেছিল...  

    Story image

    বাজার খুব গরম! প্রায় প্রতিটি টিভি চ্যানেলের সমীক্ষাই বলছে, হইহই করে ক্ষমতায় আসছে এনডিএ জোট। কোনো কোনো সমীক্ষায় তো এনডিএ-র প্রাপ্ত আসনের সংখ্যা ম্যাজিক ফিগার ছাড়িয়ে ছুটছে ৩৫০-এর দিকে। আর, এই এগজিট পোল প্রকাশিত হতেই ফেসবুকে হল্লা জুড়ে দিয়েছেন নেটিজেনরা। এমন ফলাফল নাকি অসম্ভব। আগের সেই মোদি-হাওয়া নেই। বিরোধীরা নানা জায়গায় এককাট্টা হয়েছে। তারপরেও এমন ফলাফল হয় কীভাবে! এগজিট পোল নিয়ে ট্রোলও শুরু হয়েছে। হাজারো মিম বাজারে চলে এসেছে রাতারাতি। এমনই একটা মিম শেয়ার করে সমস্যায় পড়েছেন নরেন্দ্র মোদির চরিত্রে সম্প্রতি অভিনয় করা বিবেক ওবেরয়। সেই মিমে তিনি নিজেও একটি চরিত্র, সঙ্গে ঐশ্বর্য রাই। মোদ্দায় ফেসবুক খুললেই মনে হবে, এই এগজিট পোলে প্রায় কেউ বিশ্বাস করে না। যেন এগজিট পোল-বিরোধিতার একটা ঝড় চলছে সোশাল মিডিয়ায়।

    প্রায় সব চ্যানেলেই এগজিট পোলের এমন রেজাল্ট তাহলে বেরোল কেন? অনেকেই বলছেন, এটা বিজেপি টাকা ছড়িয়ে করেছে। কিন্তু, ভোট হয়ে যাওয়ার পরে তিনদিনের এই মিথ্যে হাওয়া তৈরি করে বিজেপির লাভ কী? এরই যুক্তি হিসেবে উড়ছে ইভিএম লুট হওয়ার খবর। এমন একটা অবিশ্বাস্য সংখ্যা বাতাসে ভাসিয়ে দিয়ে ইভিএম কারচুপি করে সেটাকে মান্যতা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী ও মোদিবিরোধী জোটের অন্যতম প্রধান মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ইভিএম বদলে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কাল থেকে ফেসবুকে ঘুরছে একাধিক জায়গা থেকে ইভিএম উদ্ধারের ছবি, ভিডিও ক্লিপ। বিশ্বাসযোগ্যতা কতখানি জানা নেই, কিন্তু এইসব নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে সোশাল মিডিয়া।

    আরেকটা কারণ হিসেবে উঠে আসছে, শেয়ার বাজার। স্থায়ী সরকারের পক্ষে রায় এলে শেয়ার বাজার চাঙ্গা থাকে। এগজিট পোল সেই ঊর্ধ্বমুখী বাজারকে ধরে রাখার চেষ্টাই করেছে। ২৩ তারিখ যা হওয়ার হোক। তার আগে যেন বাজার ধাক্কা না খায়। তাহলেই প্রচুর লোকসান। ফলে, এমন রেজাল্ট বাতাসে ভাসিয়ে দেওয়া। এই যুক্তিও মনে ধরেছে অনেকের।

    বিজেপি-সমর্থকরা অবশ্য পালটা প্রতিরোধের বিশেষ চেষ্টা তেমন করছেন না আপাতত। তারা এতদিন জান লড়িয়ে দিয়েছেন। অনেক ফটোশপ তাদেরও করতে হয়েছে। অনেক মিম বানাতে হয়েছে। বালাকোটের পর তো প্রায় নাওয়া-খাওয়া ভুলে তারা মিমের পর মিম বানিয়েছেন। সোশাল মিডিয়ায় বিজেপি-আরএসএসের প্রচারকদের মতো এমন দায়বদ্ধতা আর কোনো দলের সমর্থকদেরই নেই। এখন তাদের পক্ষে তো এগজিট পোলের রেজাল্টই রয়েছে। ফলে, তারা খুব একটা প্রতিবাদ করছেন না। আর, এগজিট পোলকে বিশ্বাস না করা মানুষদের সংখ্যা তাই আরো বেশি বলে মনে হচ্ছে। একটা বাস্তবতা নির্মিত হচ্ছে, এত মানুষ যখন অবিশ্বাস করছেন, তাহলে সত্যিই এই এগজিট পোল ভুয়ো। নাহলে এমন স্বতঃস্ফূর্ত জনমত তৈরি হয় নাকি!

    মজাটা হচ্ছে, সোশাল মিডিয়ার হাওয়া দেখে কিছু বুঝতে গেলেই বিপদ। হাওয়া যে কখন কীভাবে তৈরি হয়, কখন কীভাবে ঘোরে! হাওয়া বিচার করতে গেলেই মুশকিল।

    এই যেমন ধরুন, এতদিন পশ্চিমবঙ্গে তলে তলে বিজেপির চোরাস্রোত বইছিল। কট্টর সিপিএম, মৃদু সিপিএম, অনুগত তৃণমূল সমর্থকদের অনেককেই অচেনা ঠেকছিল হঠাৎ করে। বহু বুথেই বিজেপি এজেন্ট নেই, তাতে কী! বুথের বাইরে পদ্মের অস্তিত্ব ঠিক টের পাওয়া যাচ্ছে। এই চোরাস্রোতটাই একটা ভালোমতো হাওয়ায় পরিণত হল শেষ দু’দফার ভোটে। বিদ্যাসাগর কলেজে বিদ্যাসাগর মূর্তি ভাঙার পরে অনেককেই দেখা গেল স্পষ্টাস্পষ্টি বিজেপির পক্ষ নিচ্ছেন। এবার, এই হাওয়া কতখানি জোরালো সেটা কীভাবে বুঝবেন! অনেকেই যে বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন, জানার পরেও সমীক্ষায় বিজেপির বিপুল আসন-বৃদ্ধিকে দেখে আঁতকে উঠছেন অনেকেই। এতদিন তৃণমূলের পক্ষে তেমন কোনো হাওয়া ছিল না। যেই সমীক্ষার ফল বেরোলো, অমনি মনে হতে লাগল—ধুস, এমন হয় নাকি! যে ফেসবুক খুললেই এতদিন নতুন-নতুন বিজেপি সমর্থক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল, সেই ফেসবুকেই এখন মোদিবিরোধীদের রমরমা। যে বামপন্থী ভোটব্যাঙ্কে বিপুল ধস নামার সম্ভাবনা শোনা যাচ্ছে, ফেসবুক খুললে মোটেই তেমনটা মনে হবে না। এবার, কোন হাওয়াকে বেশি বিশ্বাস করবেন, দায় আপনার।

    গোটা দেশেও এই কথা খাটে। মোদি-বিরোধী হাওয়া সত্যি কতখানি ছিল ভোটের মরসুমে? উত্তরটা ধোঁয়াশাপূর্ণ। কিন্তু, পুলওয়ামা-বালাকোটের পর দেশজুড়ে দেশপ্রেম আর পাকিস্তান-বিরোধিতার হাওয়া চরমে উঠেছিল। সেই হাওয়া কি মোদি-বিরোধী হাওয়াকে সামান্য হলেও কোণঠাসা করেনি? নাকি বিমুদ্রাকরণ, জিএসটি, এনআরসি, ইতিহাসের সর্বাধিক বেকারত্ব, কৃষক বিক্ষোভের মতো ইস্যুগুলো মোদি হাওয়াকে চুপসে দিয়েছে! উত্তর কেউই সঠিকভাবে জানে না। কিন্তু, হাওয়া আছে। মোদি-সরকার আর ফিরবে না—এই হাওয়া। আবার, উল্টো হাওয়াও আছে—দেশপ্রেমিক মোদি সরকারের। মাঝে লটকে আছেন দেশের অধিকাংশ মানুষজন। তাদের অনেকেরই ফেসবুক নেই, হোয়াটসঅ্যাপ নেই। থাকলেও তারা মিম বানাতে পারেন না। তাদের কাছে সমীক্ষকরাও যান না, মিডিয়া খুব দায়ে না পড়লে তাদের সামনে বুম ধরে না। তাদের চাকরিহীনতা, অভাব, নিরাপত্তাহীনতা, প্রত্যাশা নিয়ে ভোটের ফানুস তৈরি হয়। সমর্থন অথবা বিরোধিতার। হাওয়া ওঠে। হাওয়ায় হাওয়ায় তারাও মেতে ওঠেন। হাওয়া ফুরিয়ে যায়। ফের হাওয়া উঠতে পাঁচ বছরের অপেক্ষা। আজকাল পাঁচ মাসে প্রেমকে বিগত হয়ে যায় আর পাঁচ বছর আগের প্রতিশ্রুতি আর প্রবঞ্চনা। তাছাড়া, ভারতীয়রা চিরকালের কষ্টসহিষ্ণু জাতি...

    আইপিএল শেষ হতেই একটা শূন্যতা এসেছিল শহুরে স্পেসে। সেই শূন্যতা দখল করছে হাওয়া। কখনো মোদি কেদারনাথের গুহায় ধ্যান করছেন, কখনো মদন মিত্র সাঁতার কাটছেন, কখনো ভারতী ঘোষ কাঁদছেন, কখনো মমতা উদ্ভ্রান্ত হয়ে গেছেন বিজেপি ঝড়ে। হাওয়ার পর হাওয়া। মিমের পর মিম। ট্রোলের পর ট্রোল। আর, এগজিট পোলের একদিকে শেয়ার বাজার, অন্যদিকে মানুষের রায়। বাপ রে...

     

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @