পূর্ণ দাস বাউলের ডাকে কলকাতায় এসেছিলেন ‘মার্কিন বাউল’ ডিলান

১৯৯০ সালের জানুয়ারি। বাংলার এক বাউলের বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে এলেন এক মার্কিনি বাউল। নিজেকে একসময় ‘আমেরিকান বাউল’ পরিচয়েই চেনাতে চাইতেন বব ডিলান। কন্ঠের মাদকতায় সারা বিশ্বে তখন তাঁর আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা। কলকাতাতেও তাঁর অগণিত ভক্ত। তবু, তাঁর সেই কলকাতা সফর নিয়ে আলোড়িত হয়নি কলকাতা। কারণ, ডিলান চাননি তাঁকে নিয়ে কোনো হইচই হোক। তিনি তো গান গাইতে আসেননি, এসেছেন বন্ধুর ছেলের বিয়েতে। নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে। তাই তাঁর এই ব্যক্তিগত সফরটি নিয়ে গোপনীয়তাই রক্ষা করা হয়েছিল। আর, ডিলানের সেই বন্ধুটি হলেন বিখ্যাত বাউল গায়ক পূর্ণ দাস বাউল।
পূর্ণ দাস বাউলের সঙ্গে ডিলানের আলাপ আমেরিকার উডস্টক ফেস্টিভালে। বার্সভিলে থাকতে থাকতেই দুজনের আলাপ গড়ায় ঘন বন্ধুত্বে। এই সখ্যর মাঝখানে সেতুর কাজ করেছিল লোকসঙ্গীত। বন্ধুর নিমন্ত্রণ উপেক্ষা করতে পারেননি ডিলান। পূর্ণদাস-পুত্র দিব্যেন্দু দাসের বিয়েতে অতিথি হয়ে এসেছিলেন কলকাতায়। ছিলেন ঢাকুরিয়ায় পুড়ড়ন ডাশ বাঊলেড় তিনতলা বাড়িতেই। দিব্যেন্দুর বিয়েতে পূর্ণ দাসের সঙ্গেই তিনি পৌঁছেছিলেন বালিগঞ্জের বিবাহবাসরে। কিন্তু, তারপরেই তাঁকে নিয়ে হইচই শুরু হয়ে যায়। আগ্রহী হয়ে পড়ে সংবাদ মাধ্যমও। ব্যক্তিগত সফরে তাঁকে ঘিরে এমন হইচই পছন্দ হয়নি ডিলানের। ফলে, ঘণ্টাখানেকের বেশি তিনি কাটাননি বিবাহবাসরে।
তবে, ডিলানের সেই কলকাতা সফরে অনেক আন্তরিক মুহূর্তেরই জন্ম হয়েছিল। বাংলার নানাকিছুর মতো খিচুড়ি ভারি ভালো লেগেছিল তাঁর। তাঁর গানে তখন নতুন আশ্রয় খুঁজে পাচ্ছে বাংলার উঠতি প্রজন্ম। সুমন এবং অঞ্জনের গানেও তাই বারবার মিশে গেছিলেন ডিলান। কলকাতার সেই ডিলান-ভক্ত, সঙ্গীতপ্রেমীরা হয়তো তখন জানতেই পারেননি চুপিচুপি তাঁদের প্রিয় শহরে কিছু নিবিড় মুহূর্ত গেছিলেন ডিলান। আজ ২৪ মে, ডিলানের ৭৮তম জন্মদিনে সেই স্মৃতিই উজিয়ে তোলার ইচ্ছে হল ফের।