No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ভারতের রবীন্দ্র পুরস্কারে সম্মানিত বাংলাদেশের ‘ছায়ানট’

    ভারতের রবীন্দ্র পুরস্কারে সম্মানিত বাংলাদেশের ‘ছায়ানট’

    Story image

    ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী পালন করবার ইচ্ছা নিয়ে পাকিস্তানি শাসনের থমথমে পরিবেশেও কিছু বাঙালি জোট বাঁধলেন। সারা বিশ্বে শতবার্ষিকীর আয়োজন চাঞ্চল্য জাগিয়েছিল বাংলার সেই প্রান্তের সংস্কৃতিসচেতন মানুষের মনে। বিচারপতি মাহবুব মুর্শেদ, ডঃ গোবিন্দচন্দ্র দেব, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী প্রমুখেরা যেমন উদ্যোগী হলেন - তেমনি ঢাকার কিছু সংস্কৃতিকর্মীও যুক্ত হলেন শতবর্ষ উদযাপনে। অগ্রাহ্য হল সমস্ত নিষেধ। শতবার্ষিকী উদযাপন করার পর এক বনভোজনে গিয়ে সুফিয়া কামাল, মোখলেসুর রহমান (সিধু ভাই), সায়েরা আহমদ, শামসুন্নাহার রহমান (রোজ বু), আহমেদুর রহমান (ইত্তেফাকের ‘ভীমরুল’), ওয়াহিদুল হক, সাইদুল হাসান, ফরিদা হাসান, সনজীদা খাতুন, মীজানুর রহমান (ছানা), সাইফউদ্দীন আহমেদ মানিকসহ বহু অনুপ্রাণিত কর্মী সাংস্কৃতিক আন্দোলন চালিয়ে যাবার জন্যে সমিতি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেন। জন্ম হয় ছায়ানটের। হাড়হিম করা পাকিস্তানি যুগের শাসনে মুক্ত রবীন্দ্রচর্চা ভাবনায় যাত্রা শুরু করে ছায়ানট। 

    এই ছায়ানটের হাতে এবার নতুন পালক। কেন্দ্রীয় সরকারের রবীন্দ্র পুরস্কার (টেগোর অ্যাওয়ার্ড ফর কালচারাল হারমনি) ২০১৫-তে সম্মানিত হয়েছে বাংলাদেশের এই সংস্থা। ছায়ানট বরাবর কাজ করে এসেছে সামাজিক দায়িত্ববোধের তাড়নায়। তাই এই স্বীকৃতি নিশ্চিতভাবে তাদের অনুপ্রেরণা যোগাবে। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ছায়ানট ব্যপ্ত ছিল সাংস্কৃতিক জাগরণের মাধ্যমে বাঙালিকে আপন পরিচয়ে বাঁচবার বিশ্বাস যোগানোর কাজে। দিনে দিনে যা পূর্ণতা পায় স্বাধিকার অর্জনের আন্দোলনে। ১৯৭১ সালে হানাদার বাহিনির বিরুদ্ধে মহান বিজয় অর্জনের পর স্বাধীন বাঙালির জাতীয় মানস গঠনের প্রয়াসের পাশাপাশি, মানবিক ও সাংস্কৃতিক সম্প্রীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ শুরু করে ছায়ানট। সঙ্গীত সংস্কৃতিকে উপজীব্য করে বাঙালির সর্বাঙ্গীণ কল্যাণের ব্রত নিয়ে নিজস্ব ভবন থেকে প্রত্যয়ী অভিযাত্রায় এগিয়ে চলেছে সকলের ভালবাসাধন্য এই প্রতিষ্ঠান।

    ষাটের দশকের শুরুতে দ্বিজাতিতত্বে বিভক্ত পূর্বপাকিস্তানে বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে যখন সাম্প্রদায়িক চেতনা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তার প্রতিবাদস্বরূপ রবীন্দ্রসঙ্গীত ও রবীন্দ্রভাবনাকে অবলম্বন করে ছায়ানট যাত্রা শুরু করে। কাজেই সেই বিবেচনায় রবীন্দ্র পুরস্কার প্রাপ্তিতে ছায়ানট অনেকটাই প্রাসঙ্গিক। তবে এটাও বলে রাখা প্রয়োজন যে, ছায়ানটের শুরুতে তার পুরোধা ব্যক্তিরা রবীন্দ্রচর্চায় নিবেদিত থাকলেও ছায়ানটে বরাবরই অন্যান্য গানের চর্চাও হয়েছে। কাজেই সেই অর্থে ছায়ানট শুধুমাত্র পিওর রবীন্দ্রচর্চার সঙ্গেই যুক্ত নয়। সেই সঙ্গে বাংলা গানের অন্যান্য ধারার প্রসারেও পুরোদমে কাজ করে চলেছে।

    প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য এর আগে নির্দিষ্টভাবে কোনো সংগঠন রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত হয়নি। সাধারণত বিশেষ কোনো ব্যক্তিত্বকে তাঁদের সৃজনকর্মের জন্য সম্মান জানানো হয়। প্রথমবার ছায়ানটের মতো কোনো সংস্থা ভারত থেকে এই সম্মানে ভূষিত হল। ভারত বরাবরই বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম দেশ। বিশেষ করে সংস্কৃতি চর্চায় ভারত-বাংলাদেশের মূল সূত্র একই। কাজেই সংস্কৃতির ভাবনা চর্চায় এই দুই দেশ বহুকাল ধরেই কাছাকাছি পাশাপাশি বয়ে চলেছে। তাই গ্লোবাল বাউন্ডারি বা কাঁটাতার কখনই এক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। এই পুরস্কারটি দুই দেশের সেই মেলবন্ধনকেই আরও দৃঢ় করে। 

    ছায়ানট তার নিয়মিত প্রশিক্ষণ বা অনুষ্ঠান ছাড়াও অন্যান্য বেশকিছু নতুন কাজকর্ম হাতে নিতে যাচ্ছে। অনলাইনের মাধ্যমে ছায়ানটের কার্যক্রম দেশে এবং দেশের বাইরেও যেন ছড়িয়ে পড়ে সে ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা কার্যক্রম প্রচারের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ছায়ানট আমাদের দুই দেশের গর্ব। বাঙালির সাংস্কৃতিক আন্দোলনে এই সংস্থার নাম শুরুতেই উঠে আসবে, একথা অনস্বীকার্য। তাদের পুরস্কারপ্রাপ্তি আমাদেরও গর্বিত করেছে। 

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @