কেমন আছে কালিম্পং-এ রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি?

রাজ্য হেরিটেজ কমিশন পাহাড়ের মংপুতে রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত ভবন ঘিরে যেমন কাজ শুরু করেছে, তেমনই কালিম্পং-এর রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত গৌরীপুর হাউস এবং চিত্রভানু ঘিরেও কাজ শুরু করেছে। কালিম্পং-এর বাড়ি দুটি রাজ্য হেরিটেজ কমিশন অধিগ্রহণ করার বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে গত মার্চ মাসের ২১ তারিখে। সেই অনুযায়ী কিছু কিছু কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় রবীন্দ্র অনুরাগীরা চাইছেন, ওই দুটি স্থানেই রবীন্দ্র মিউজিয়াম তৈরি হোক।
১৯৩৮ সাল থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত মোট চার বার কালিম্পং-এ এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। শেষ বার আসেন ১৯৪০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। সেবারে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুরের জমিদার ব্রজেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর বাড়ি ছিল সেটি। বাড়িটির অবস্থান কালিম্পং শহর থেকে দক্ষিণ দিকে এক কিলোমিটার গিয়ে খানিকটা পশ্চিম দিকে। রাস্তার নাম রিং কিং পং রোড। এই বাড়িতেই বিশ্বকবি অতিথি হিসাবে এসেছিলেন। সেই বাড়িতে রবীন্দ্রনাথের ব্যবহার করা কোনও জিনিসই আর নেই। তবে সেই বাড়ির এক স্থানে একটি ফলকে লেখা আছে, ‘এই ভবনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাস করিতেন এবং ২৫ শে বৈশাখ ১৩৪৫ সনে জন্মদিন কবিতা আকাশবাণীর আবৃত্তি করিয়াছিলেন।’ রবীন্দ্রনাথ তাঁর আশিতম জন্মদিন কাটিয়েছিলেন এই বাড়িতে। নিজের লেখা ‘জন্মদিন’ কবিতাটি তিনি এখান থেকেই আবৃত্তি করেছিলেন টেলিফোনে, যেটি আকাশবাণী কলকাতা সরাসরি সম্প্রচার করেছিল। আর বলা হয়, কালিম্পং-এর সঙ্গে কলকাতার টেলিফোন যোগাযোগের সূচনা নাকি হয়েছিল এর পর থেকেই। সেই ঐতিহাসিক বাড়ি হেরিটেজ কমিশন নিয়ে নিলেও এখনও সেভাবে কাজ শুরু হয়নি। সেই বাড়ির সামনে পলিটেকনিক কলেজের কাজ হচ্ছে। ফলে বালি, পাথর এবং নির্মাণের সামগ্রী ফেলে রাখা হচ্ছে ওই বাড়ির সামনে। পুরানো সেই বাড়িটির আজ ভগ্ন দশা। অনেকটা ভুতুড়ে বাড়ির মতো। স্থানীয় মিলনী ক্লাবের সভাপতি দুলাল রায় জানিয়েছেন, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কালিম্পং-এর রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত বাড়িগুলি সংস্কারের কথা বললে মুখ্যমন্ত্রী তাতে রাজি হন। এরপর সেসব হেরিটেজ কমিশনের অধীনে নিয়ে যাওয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। যদিও অন্যবারের মতো এবারেও মিলনী ক্লাব সেখানে কবি প্রণাম আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে।
আরও পড়ুন
মংপুতে রবীন্দ্রনাথ
এই গৌরীপুর হাউসের কাছেই অতিশা রোডে রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত চিত্রভানু-র অবস্থান। সে বাড়িটির জমি কেনা হবে বলে কবিই স্থান নির্বাচন করে দিয়ে যান। কবির খুব ভালো লাগত কালিম্পং। তাই কালিম্পং-এ স্থায়ী একটি আবাস তৈরি করতে চান কবি। ১৯৪১ সালে কবির পুত্র রথীন্দ্রনাথের স্ত্রী প্রতিমা দেবীর নামে লিজে নেওয়া হয় জমি। সেখানে নির্মাণের সময় রথীন্দ্রনাথ নিজে দাঁড়িয়ে থেকে নির্মাণ করিয়েছিলেন। পরে বিশ্বভারতীর উপাচার্য হিসাবে রথীন্দ্রনাথ কাজে ব্যস্ত থাকলে প্রতিমাদেবি দীর্ঘদিন সেই চিত্রভানুতে ছিলেন। আর তিনি থাকার সময় চিত্রভানুর লনে তিনি কয়েকবার রবীন্দ্র জন্ম জয়ন্তী পালন করেছিলেন। সেই সময় কালিম্পং টাউন হলে রবীন্দ্র জন্ম জয়ন্তী পালন হলে তাতে উপস্থিত ছিলেন প্রতিমা দেবী। ২০১১ সালের ভূমিকম্পে সেই বাড়ির অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখানে প্রতিমা দেবীর ব্যবহার করা টেবিল, চেয়ার, খাট সবই আছে। তাছাড়া কবিগুরুর অনেক হাতের কাজ এখানে আছে। সেখানে অবশ্য এখন রাজ্য সরকারের তরফে মহিলাদের হাতের কাজের কিছু প্রশিক্ষণ হয়। কবি পুত্র রথীন্দ্রনাথের স্টুডিওর নামে এই বাড়ির নামকরণ হয় চিত্রভানু।
১৯৩৮ সালের ২৫ এপ্রিল প্রথম বার কবি কালিম্পং যান। উঠেছিলেন গৌরীপুর হাউসে। ‘জন্মদিন ছাড়াও, এখানে বসে কবি আরও কয়েকটি কবিতা লেখেন। তাঁর প্রয়াণের পর চিত্রভানুর দেওয়ালে মার্বেল পাথরে কবিতার কয়েকটি লাইন খোদাইও করা হয়।