বাবরি মসজিদ, গুজরাট সব ঘটেছিল এই বাংলায়

৯২-এ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা কোথায় ঘটেছিল? কী বলছেন? অযোধ্যায়? না, না ভুল। ২০০২-এ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা? গুজরাট? না, না, এবারও আপনি ভুল। সব ঘটেছিল আমাদের পশ্চিমবঙ্গে। বাউল-ফকির, পীর এসব দিয়ে কি সত্যকে ঢেকে রাখা যায় মশায়? সত্য হল গিয়ে ছবির মতন স্পষ্ট। ওই দেখুন, কিভাবে নারীর বস্ত্র হরণ করছে, দেখছেন না তা নিয়ে টাইমস নাও-এর মতন শক্তিশালী মিডিয়া ঘন্টাখানেক জুড়ে প্রোগ্রাম করল। কী বলছেন? ওটা ভোজপুরী ফিল্মের দৃশ্য? তো কী হয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখুন, নিশ্চই বাংলায় শুটিং হয়েছিল। একটা সর্বভারতীয় চ্যানেল তো আর মিথ্যে দেখাতে পারে না। ইজ্জত নেই, বুঝলেন এ রাজ্যের আসল ভাবমূর্তিটা বেরিয়ে পড়েছে। আর আমাদের সোনার টুকরো ছেলে অর্ণব তো ওর রিপাবলিকে দেখিয়েই দিল মুর্শিদাবাদের মানসিক বিপর্যস্ত নারীকে পিটিয়ে মারার ঘটনা আসলে বসিরহাটের।
বসিরহাট, বাদুড়িয়া বুজলেন মশায় আজব জায়গা। গোটা দুনিয়ার ছবির তলায় এখন লেখা থাকছে ওই নামগুলো। কেন বাপু আমরা পিছিয়ে পড়ছি? আমরা মানে? আরে বাবা রাজধানী কলকাত্তা। আরে বাঙালি বাঙালি করে হেদিয়েই মরে গেল সব। আগে বল তুই বাঙালি হিন্দু না বাঙালি মুসলমান। ওটাই তো তোর আসল পরিচয়। তা না খালি বাঙালি। আরে ভাষা দিয়ে তুই কী ধুয়ে জল খাবি? কলকাতায় তো মারামারি কম পড়েনি। এই তো একটু আগে গড়িয়াহাটে বাস থেকে নামিয়ে পকেটমার পেটাল দশ-বারো জন জোয়ান মদ্দ, ছবি তুলতে পারলি না? আর পাশের বাড়িতে বাবার পার্স থেকে সামান্য পঞ্চাশ টাকা হড়কাতে গিয়ে বাবার হাতে বেধড়ক মার খেল ঝন্টু। ওর চোয়াল পর্যন্ত ফুলে গিয়েছিল। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে সতেরো বছরের শিশুটার কী কান্না। ছবি তুলতে পারলি না? না পারতি, বলতি, হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিতুম। শহরটা যে পিছিয়ে পড়ছে রে! আর জায়গার নাম কিছু একটা দিয়ে দিলেই হত। দিতিস না হয় দণ্ডীরহাট। ছবিটাতে তো কলকাতা যোগ থাকতো একটা। বাবা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধির সঙ্গে ছেলে সম্প্রদায়ের প্রতিনিধির স্বার্থের সংঘাত কি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নয়? কে বলেছে? সংজ্ঞাটাকে একটু টেনে বাড়াতে শেখ, কবে আর উদার হবি তোরা।
জাতের কত্ত বড় শক্তি তা এই কলকাতায় বসেই দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলী মশায়। না, না, ফিল্ম মেকার নয়। মনোবিদ। বিজেপি তখনও জন্মায়নি তো কী হয়েছে, তার বাপ-ঠাকুর্দারা জন্মেছে, আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। পার্কে পার্কে হাফ প্যান্ট পরে প্যারেড করছে। সে সময় ধীরেন্দ্রনাথ লিখলেন, বিচ্ছিন্নতার ভবিষ্যৎ। কী ভাবে মাস হিস্টিরিয়া তৈরি হয়। এই রেসিপিটা যে পরে মিডিয়াও লপ্ত করে ফেলবে তা কি আর তিনি জানতেন? কী বলছেন? বাংলার মিডিয়া ভালো ভূমিকা নিচ্ছে? সম্প্রীতির খবর ছড়াচ্ছে। আরে মশায় রাখেন বাঙলা আর বাংলার মিডিয়ার কথা। কথা হচ্ছে গোটা দেশ কী জানছে পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে। খালি দুধে-ভাতে থেকে আতুপুতু গান গাওয়া বেকার জীবন। মশায় এখন জেবনে থ্রিল আসছে, বুঝলেন না। দেখুন ভোজপুরীকেও বাঙলা কেমন কবজা করে নিয়েছে। এই ভাবে যুদ্ধং দেহি স্পিরিট নিয়েই তো এগিয়ে যেতে হবে। আরে মশায় গোবরবাবু আমাদের রক্তে, পালোয়ানের জাত না আমরা।
আসল কথা হল সর্বভারতীয় মিডিয়া মশায়। নুপূর শর্মার কত্ত বড় হৃদয় দেখুন। ওই গুজরাটের আগুনের ছবি থেকে নিজেদের দলীয় স্বত্বটুকু মুছে দিয়ে ছবিটা স্বেচ্ছায় পশ্চিমবঙ্গকে দান করলেন মহিলা। মাদার টেরিজার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে মাইরি। আর ভোজপুরী ছবির দৃশ্যও তো আরেক মহামানবের দান গো। হরিয়ানার বিজেপি নেতা বিজেতা মালিক। এই সব মহামানবদের দান আপনারা না মনে রাখলেন তো কী হল। সর্বভারতীয় মিডিয়ার তো এরাই রূপকার গো। বাংলার মুখের নতুন রূপকার। গড় করেন মশায়, পেন্নাম করেন।